IQNA

কোরআনে সহযোগিতা /৪

সহযোগিতা ও সামাজিক নিরাপত্তার তাত্ত্বিক ভিত্তি

20:34 - October 21, 2025
সংবাদ: 3478289
ইকনা- সমাজের দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত শ্রেণির প্রতি সহযোগিতা ও সামাজিক সহায়তা, পবিত্র কোরআনের আয়াত ও আহলে বাইতের (আ.) বাণী অনুযায়ী, এক বিশ্বাসীর আচরণের অবিচ্ছেদ্য অংশ ও অপরিহার্য কর্তব্য।
সুরা মু্দ্দাসসিরে, জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীদের কথোপকথনের সময় জাহান্নামে যাওয়ার একটি কারণ হিসেবে অভাবীদের আহার না দেওয়াকে উল্লেখ করা হয়েছে:
 
«مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ * قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ * وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ * وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ الْخَائِضِينَ * وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّينِ» (مدثر: 42-46)
 
অর্থাৎ — “তোমাদের কী জাহান্নামে নিয়ে গেল? তারা বলবে, আমরা নামাজ আদায় করতাম না, অভাবীদের আহার দিতাম না, অর্থহীন আলাপে লিপ্ত থাকতাম এবং পরকালের হিসাব অস্বীকার করতাম।”
এই বিষয়টি কেবল পরকালীন জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। সুরা ফজরে, দুনিয়াতেই মানুষের অপমান ও আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হিসেবে এতিমদের সম্মান না করা এবং অভাবীদের আহারে উৎসাহ না দেওয়াকে উল্লেখ করা হয়েছে:
 
«وَأَمَّا إِذَا مَا ابْتَلَاهُ فَقَدَرَ عَلَيْهِ رِزْقَهُ فَيَقُولُ رَبِّي أَهَانَنِ * كَلَّا بَلْ لَا تُكْرِمُونَ الْيَتِيمَ * وَلَا تَحَاضُّونَ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِينِ» (فجر: 16-18)
 
অর্থাৎ — “আর যখন আল্লাহ তাকে পরীক্ষা করেন এবং তার রিজিক সীমিত করেন, তখন সে বলে, ‘আমার প্রভু আমাকে অপমান করেছেন।’ কখনো না! বরং তোমরা এতিমকে সম্মান করো না এবং একে অন্যকে অভাবীদের আহারে উৎসাহিত করো না।”
«تُكْرِمُونَ الْيَتِيمَ» — এই বাক্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিহিত আছে। প্রথমত, এতিমের কেবল দেহ নয়, তার আত্মাও সম্মানের দাবিদার। অর্থাৎ এতিমদের প্রতি প্রথম কর্তব্য হলো তাদের ব্যক্তিত্বকে সম্মান করা। আল্লাহ যখন মানুষকে মর্যাদা দিয়েছেন, তখন সেই মর্যাদার প্রতিফলন এতিমদের প্রতিও হওয়া উচিত।
আর «تَحَاضُّونَ» শব্দের অর্থ হচ্ছে “এক অপরকে উৎসাহ দেওয়া”। অর্থাৎ শুধু দরিদ্রদের আহার দেওয়া যথেষ্ট নয়; বরং মানুষকে এ কাজে উৎসাহিত করতে হবে, একে অন্যকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা করতে হবে।
এই কারণেই এতিমকে সম্মান করা ও অন্যদের প্রতি সদাচরণে সহযোগিতা করা মানুষের রিজিক, মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কোরআন ও সুন্নাহর ঐতিহ্যে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সাহায্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে, এতে কিছু দার্শনিক ভিত্তিও পাওয়া যায়— যেমন: সম্পদ সমাজের সামগ্রিক মালিকানাধীন, প্রাকৃতিক সম্পদে প্রত্যেক মানুষের অধিকার রয়েছে, ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের ধারণা, ধনীদের সম্পদে গরিবদের অংশগ্রহণের নীতি।
পরবর্তী পর্বগুলোতে সহযোগিতা ও সামাজিক দায়িত্বের এসব তাত্ত্বিক ভিত্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। 3495043#
 
captcha