IQNA

আফ্রিকার অ্যাঙ্গোলায় ইসলামের আলো

18:17 - October 25, 2025
সংবাদ: 3478317
ইকনা- আফ্রিকা মহাদেশের একটি দেশ অ্যাঙ্গোলা। এখানে মূর্তিপূজারির সংখ্যাই অধিক। মূর্তিপূজারিদের আছে বিভিন্ন গোত্র। তাদের মূর্তি নির্বাচনও স্বতন্ত্র।
এক গোত্র যে মূর্তির পূজা করছে, অন্য গোত্র তা বাদ দিয়ে অন্য কোনো মূর্তির উপাসনা করছে। সেই সঙ্গে মূর্তিপূজারি আফ্রিকাবাসীর মধ্যে যে ত্রুটি ব্যাপক লক্ষণীয় তা অ্যাঙ্গোলার মূর্তিপূজারিদের মধ্যেও সার্বিকভাবে বিদ্যমান। আর তা হলো—মূর্খতা ও নিরক্ষরতা। কিন্তু সেখানে এখন ঘটেছে এক ব্যতিক্রম।
 
মূর্খ জনপদে জ্ঞানের আলো এসে যেমন অমাবস্যার নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে উজ্জ্বল দীপ্তি ছড়িয়ে সব অন্ধকার মুহূর্তে বিলীন করে দেয়, অ্যাঙ্গোলাতেও তেমনি ইসলাম ধর্মের আগমনে এখন মূর্তিপূজার আঁধারিমা বিলীন হতে চলছে। তবে ঠিক কোন সালে অ্যাঙ্গোলায় ইসলামের আগমন ঘটে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। কেননা, এ দেশটির বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে কেন্দ্র করে কোনো ইতিহাস এখনো লেখা হয়নি।
এ ক্ষেত্রে তাই প্রামাণ্য ও নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণাদি উপস্থাপন কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
 
 
তাই বর্তমান বর্ধিষ্ণু মুসলমান নাগরিক ও তাদের ধর্মীয় চেতনা, জাগরণ ইত্যাদি দেখে মনে করা হয় যে অ্যাঙ্গোলায় ইসলাম নবাগত। তবে বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ থেকে প্রকাশ পায়, এ দেশে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি হলেন আবদুল্লাহ সালভাদর। তিনি প্রথমে ছিলেন কঙ্গোর অধিবাসী। সেখানে থাকাবস্থায় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে অ্যাঙ্গোলার রাজধানী লিওন্ডাতে এসে বসতি স্থাপন করেন।
 
তখন ১৯৭৮ সাল। আবদুল্লাহ সালভাদরের পোশাক-পরিচ্ছদ ও আচার-আচরণ অন্যদের থেকে পৃথক হওয়ায় সহজেই তা সবার নজরে পড়ে। ক্রমে ক্রমে আরো এমন কিছু লোকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও যোগাযোগ স্থাপিত হয়, যাঁরা পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু মুসলমান হিসেবে তাঁদের চলাফেরা ও পোশাক-পরিচ্ছদের স্বাতন্ত্র্য বলতে কোনো কিছুই ছিল না। তবু তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে আবদুল্লাহ সালভাদর আত্মিক শক্তি লাভ করলেন। আবদুল্লাহ সালভাদর তাঁদের সবাইকে একত্রে নামাজ আদায় করার প্রেরণা ও উৎসাহ প্রদান করলে সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাময়িকভাবে এ জন্য আবদুল্লাহ সালভাদরের বাসায়ই জামাতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরে ১৯৮৫ সালে ভিন্ন একটি স্থান নির্ধারিত হয় এবং সেখানেই যথারীতি জামাতে নামাজ পড়া আনুষ্ঠানিক রূপ নেয়। এভাবেই অ্যাঙ্গোলার রাজধানী লিওন্ডাতে ইসলামের বাহ্যিক প্রকাশ ঘটে।
 
অ্যাঙ্গোলায় ইসলামের আগমন সে যেন অন্ধকারের মধ্যে ক্ষীণ আলোকশিখার দীপ্তি বিচ্ছুরণ। তাই ইসলামের প্রথম যুগের মতো এখানেও ইসলাম এগোচ্ছে গুটি গুটি পায়ে। ১৯৭৮ সালে আবদুল্লাহ এ দেশে আসার পরই একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে তা আজ পর্যন্ত সরকারি স্বীকৃতি পায়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবে এ সংস্থার কাজ চলছে ধীর ও মন্থর গতিতে। এখন অ্যাঙ্গোলায় মুসলমানের সংখ্যা কত? এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া যায় না। তবে কেউ বলেন তিন হাজারের অধিক। সে ক্ষেত্রে অন্যদের বক্তব্য হচ্ছে হাজারের অধিক মুসলমান এ দেশটিতে ইসলামী বিধি-বিধান মেনে জীবনযাপন করে চলেছে। ইসলামের বিজয় মিছিল কখনো থেমে থাকে না।
 
অ্যাঙ্গোলার মুসলমানদের এখন সবচেয়ে বড় যে সমস্যা, তা হলো ইসলামী সংস্থা। সরকারি স্বীকৃতি না পাওয়ার ফলে যেমন নির্বাচনে মুসলমানদের প্রকৃত প্রতিনিধি হিসেবে কাউকে উপস্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না, তেমনি মুসলমানদের দ্বিনি ও পার্থিব স্বার্থসংশ্লিষ্ট বহু কিছুই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যেমন—বৃহদায়তন কয়েকটি মসজিদ ছাড়া আর কোথাও নামাজের জন্য স্বতন্ত্র স্থান মসজিদের মর্যাদা নেই, বরং কোনো আবাসে এক বা একাধিক কামরা এর জন্য পৃথক করে রাখা হয়েছে; তেমনি সংস্থার পরিকল্পনায় রয়েছে মুসলিম অ্যাঙ্গোলাবাসীর জন্য একটি মুখপত্র ও সাময়িকী প্রকাশ, যা আজও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। বর্তমান সময়ে দ্বিনের দাওয়াতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে ইসলামী সাহিত্য। তাই সংস্থার কর্মীরা স্থানীয় ভাষায় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।  কালের কণ্ঠ
captcha