IQNA

লন্ডনের প্রাচীনতম ইসলামিক বইয়ের দোকান বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে

17:40 - October 27, 2025
সংবাদ: 3478326
ইকনা- লন্ডনের প্রাচীনতম ইসলামিক বইয়ের দোকান ‘দারুল তাকওয়া’ (Dar Al-Taqwa) চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কার্যক্রম চালানোর পর এখন আর্থিক সংকটে পড়ে বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
গার্ডিয়ান সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে মিশরীয় প্রকাশক সামির আল-আত্তার এই বইয়ের দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেন। এটি কেবল ইসলামী বই বিক্রির স্থানই ছিল না, বরং একটি সংস্কৃতিক ও বৌদ্ধিক মিলনমেলা, যেখানে মুসলিম ও ব্রিটিশ ছাত্রছাত্রী, গবেষক এবং চিন্তাবিদরা মতবিনিময়ের সুযোগ পেতেন।
দোকানটি লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে, বিখ্যাত বেকার স্ট্রিটের কাছাকাছি অবস্থিত এবং ব্রিটেনের প্রাচীনতম স্বাধীন ইসলামিক বইয়ের দোকান হিসেবে পরিচিত। তবে এখন এটি ভাড়া ও পরিচালন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রায় ৪০ বছরের সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চার পর এই প্রতিষ্ঠানটি অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করছে।
সামির আল-আত্তারের মৃত্যুর পর (২০২২ সালে), তাঁর স্ত্রী নোরা আল-আত্তার, যিনি ব্রিটেনে জন্ম নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, এখন ৬৯ বছর বয়সে দোকানটির দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনি জানান, “দারুল তাকওয়া সবসময় জনগণের সহযোগিতায় চলেছে, কখনো ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভর করেনি।” বর্তমানে তিনি ২৫,০০০ পাউন্ড জরুরি তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন, যা দিয়ে দোকানের ভাড়া ও পরিচালন খরচ মেটানো হবে।
দারুল তাকওয়া প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ইসলামী চিন্তা, দর্শন, রাজনীতি, এবং শিশুদের জন্য ইসলামিক সাহিত্য প্রকাশ ও বিক্রির মাধ্যমে মধ্যপন্থী ইসলামিক চিন্তাধারার প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া বহু ভাষায় অনূদিত পবিত্র কুরআনসহ নানা গবেষণাধর্মী বই এখানে পাওয়া যায়।
দোকানটি লন্ডনের সেন্ট্রাল মসজিদের কাছেই অবস্থিত হওয়ায়, এটি মুসলিম দর্শনার্থী, আলেম, গবেষক ও প্রবাসীদের জন্য একটি বৌদ্ধিক কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত ছিল।
তবে গত এক দশকে ডিজিটাল যুগের পরিবর্তন এই দোকানকেও প্রভাবিত করেছে। অনলাইন বই বিক্রি ও ই-বুকের প্রসারে সরাসরি দোকানে আসা ক্রেতার সংখ্যা ক্রমে কমেছে। দোকানের এক কর্মী বলেন, “মানুষ এখন অনলাইনে পড়ছে, তাই সরাসরি বই কিনতে আসা কমে গেছে।”
এক মালয়েশীয় ক্রেতা মন্তব্য করেন, “দারুল তাকওয়া কেবল একটি বইয়ের দোকান নয়, বরং এটি জ্ঞান ও সম্পর্কের এক উন্মুক্ত চুল্লি; এর বন্ধ হয়ে যাওয়া বড় ধরনের ক্ষতি হবে।”
দারুল তাকওয়ার বর্তমান সংকট ইউরোপজুড়ে ইসলামিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বাস্তব চিত্রও তুলে ধরে। এখন চ্যালেঞ্জ কেবল বই বিক্রির নয়, বরং এমন সাংস্কৃতিক পরিসরগুলো জীবন্ত ও সক্রিয় রাখা, যেখানে মানুষ চিন্তা ও মতবিনিময়ের সুযোগ পায়।
এই বইয়ের দোকানটি শুধু মুসলমানদের ইতিহাসের অংশই নয়, বরং ব্রিটেনে ভারসাম্যপূর্ণ ও মুক্তমনা ইসলামিক গঠনচর্চার এক প্রতীক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।
আজ দারুল তাকওয়া দাঁড়িয়ে আছে এক মোড়ে—
হয় সমাজের সহায়তায় এটি টিকে থাকবে ইসলামী চিন্তার এক আলোকবর্তিকা হিসেবে,
অথবা নিঃশব্দে হারিয়ে যাবে ডিজিটাল অর্থনীতি ও আধুনিক সমাজের একাকীত্বে বিলুপ্ত বহু স্বাধীন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের কাতারে।
শেষে বলা যায়, দারুল তাকওয়া ইউরোপে চার দশকের ইসলামিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের এক জীবন্ত সাক্ষী, যা স্মরণ করিয়ে দেয়— মুসলিম সমাজের জন্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো পরিচয় ও সংলাপের সেতুবন্ধন হিসেবে অপরিহার্য। 4312934#
 
captcha