IQNA

লাদাখে ইসলাম আগমনের ইতিহাস

0:01 - March 27, 2021
সংবাদ: 2612521
তেহরান (ইকনা): লাদাখ কাশ্মীরের অংশ হলেও ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনধারার বিচারে একটি আলাদা জনপদ। লাদাখের প্রধান শহর লেহকে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু শহর বলা হয়। সমুদ্র স্তর থেকে এই শহরের উচ্চতা সাড়ে ১১ হাজার ফিট। লাদাখের পাহাড়গুলো প্রধানত শুষ্ক এবং বরফ আচ্ছাদিত, বৃষ্টি হয় খুব কম। কিন্তু বরফ আচ্ছাদিত পাহাড় পানির প্রয়োজন পূরণ করে। ভৌগোলিকভাবে লাদাখ দুটি জেলায় বিভক্ত। লেহ ও কারগিল। লেহ বৌদ্ধ অধ্যুষিত এবং কারগিল মুসলিম অধ্যুষিত। সামগ্রিকভাবে লাদাখের ৪৭.৪ থেকে ৫২ শতাংশ অধিবাসী মুসলিম। প্রাকৃতিকভাবে লাদাখ ভারতের অন্যতম সুন্দর অঞ্চল। কাশ্মীরের মতো এখানেও নৈস্বর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে আসে বিপুলসংখ্যক পর্যটক।
লেহ শহর অত্যন্ত সুন্দর এবং পরিচ্ছন্ন। এর পাহাড়ি ঢালে রয়েছে মুসলিম মালিকানাধীন বহু প্রাচীন বাগান, যা মোগল আমলে গড়ে উঠেছিল। মোগলদের মাধ্যমেই লাদাখে রাজনৈতিকভাবে ইসলামের আগমন হয়। তবে তার বহু আগে ইসলামপ্রচারকদের মাধ্যমে এই অঞ্চলে একত্ববাদের বাণী ছড়িয়ে পড়ে। ৪০০ বছর আগে লেহ শহরে অবস্থিত মহারাজার বাড়ির বিপরীতে কেন্দ্রীয় মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যা এখনো ইসলামী কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
 
লাদাখের মানুষ নম্র, ভদ্র ও শান্তিপ্রিয়। বৃহৎ কাশ্মীর অঞ্চলের অংশ এবং পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী হওয়ার পরও লাদাখের শান্তি ও স্থিতি দৃষ্টান্ততুল্য। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে এখানে প্রচণ্ড শীত শুরু হয় এবং জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। পর্যটক না থাকায় তখন বাজার, হোটেলসহ অন্যান্য ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। আঞ্জুমানে মুঈনুল ইসলাম লেহের শীর্ষ সংগঠন। সংগঠনটি স্থানীয় মুসলিমদের ধর্মীয়, জ্ঞানগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক পথপ্রদর্শন করার পাশাপাশি তাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রয়োজনও পূরণ করে। সংগঠনটি পুরো অঞ্চলের জাকাত একত্র করে তা অসহায়, দুস্থ, এতিম ও পিছিয়ে পড়া মুসলিমদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়। এই ফান্ড থেকে মেধাবী মুসলিম তরুণদের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
 
লাদাখে বেশকিছু মুসলিম পরিচালিত ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ইসলামিয়া পাবলিক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অন্যতম। যেখানে সাধারণ ও ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বিত সিলেবাস অনুসরণ করা হয়। লাদাখে রয়েছে ঐতিহাসিক ‘লেহ জামে মসজিদ’। সাইয়েদ মির আলী হামদানি (রহ.) মসজিদটি নির্মাণ করেন। প্রাচীন রীতিতে তৈরি হলেও মসজিদের অবকাঠামো বেশ মজবুত ও দৃষ্টিনন্দন। লেহ শহরেই লাদাখের সবচেয়ে বড় মুসলিম বসতি অবস্থিত। তাদের বেশির ভাগই শিয়া মতাবলম্বী। তবে সুন্নি মতবালম্বীদের উপস্থিতি রয়েছে সেখানে। মাওলানা মুহাম্মদ ওমর নদভি প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায়ে উলুমিল কোরআন সুন্নি ধারার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
 
লাদাখে শিয়া মতাবলম্বীদের আধিক্যের অন্যতম কারণ হলো, এখানে ইসলামের প্রসার ঘটেছিল শিয়া রাজকন্যার সঙ্গে বৌদ্ধ রাজার বিয়ের মাধ্যমে। ঐতিহাসিকরা বলেন, সম্রাট বাবরের চাচাতো ভাই মির্জা হায়দার দুগলাত ১৫৩২-৩৬ সালে লাদাখ জয় করেন। পরবর্তী সময়ে বালতিস্তানের ‘স্কারদু’র শাসকরা লাদাখের বিরুদ্ধে মোগল সাম্রাজ্যের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে। তারা ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে লাদাখের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে এবং তার শাসক রাজা জামইয়াং নামগয়ালকে বন্দি করে। যিনি পরবর্তী সময়ে স্কারদুর আলী মির খানের মেয়ে গয়াল খাতুনের প্রেমে পড়েন এবং উভয়ের মধ্যে বিয়ে হয়। গয়াল খাতুনের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক শিয়া ধর্মাবলম্বী লেহ শহরে আগমন করে এবং পরবর্তী সময়ে সেখানেই থেকে যায়। এ ছাড়া পরবর্তীকালে কাশ্মীরসহ পার্শ্ববর্তী মুসলিম অঞ্চল থেকে বহু মুসলিম ব্যবসায়ী লাদাখে আসেন। অবশ্য ১৬৬৩ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আওরঙ্গজেব কাশ্মীর ভ্রমণের সময় লাদাখে প্রতিনিধি পাঠিয়ে সেখানে মসজিদ নির্মাণের অঙ্গীকার আদায় করেন। ১৬৬৬/৬৭ খ্রিস্টাব্দে লেহ শহরে প্রথম সুন্নি মসজিদ নির্মিত হয়।
সূত্র : তামিরে হায়াত, ডিসেম্বর ২০০৩ প্রথম সংখ্যা; প্রবন্ধ : জন বেরি, রিডিংস অন ইসলাম ইন লাদাখ।
captcha