তবে তুরস্কের কোনিয়া শহরে একটি প্রতীকী কবরও আছে। মাওলানা রুমির মাজারের আশপাশে তাঁর শিষ্যদের সমাধি আর একটি প্রতীকী কবরে আল্লামা মুহাম্মদ ইকবালের একটি শিলালিপিও আছে। কোনিয়া তুরস্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক শহর।
এর পুরনো ইতিহাস-ঐতিহ্য ছাড়াও এই শহরকে অন্যদের থেকে অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বিশ্বে তুলে ধরেছে যে এখানেই মাওলানা রুমির সমাধি আছে।
এ কারণেই কোনিয়া এখনো তুরস্কের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী শহর এবং এটি তুরস্কের ‘ইসলামী দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত।
মুনির রাজমি বলেন, মাওলানা রুমি ১৩ শতকের একজন মহান সুফি সাধক এবং কবি ছিলেন। তার পুরো নাম জালালুদ্দিন মুহাম্মদ রুমি। তিনি বর্তমান আফগানিস্তানের বলখ শহরে জন্মগ্রহণ করেন, কিন্তু মঙ্গোলিয়ানদের আক্রমণের কারণে তাঁর পিতা পশ্চিমা দেশে পাড়ি জমান, যেখানে তিনি অবশেষে কোনিয়াতে বসতি স্থাপন করেন।
আজ এই শহরে মাওলানা রুমির মাজার সব পর্যটকের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
পবিত্র আসমানি গ্রন্থ কোরআনের পরে মাওলানা রুমির বিশ্ববিখ্যাত কাব্য সংকলন ‘মাসনবী’ বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত বইগুলোর মধ্যে একটি। বিশ্বের মানুষ যেখানে তাঁর মাজার জিয়ারত করে, তার আশপাশে তাঁর শিষ্যদের কবরও রয়েছে। তন্মধ্যে একটি কবরের শিলালিপিতে আল্লামা ইকবালের নামও লেখা রয়েছে।
শিলালিপিতে লেখা আছে,
‘এই স্থানটি পাকিস্তানের জাতীয় কবি ও বুদ্ধিজীবী মুহাম্মদ ইকবালকে দেওয়া হয়েছে, স্বীয় প্রিয় মুর্শিদ মাওলানা রুমির আধ্যাত্মিক উপস্থিতিতে ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দ।
’
পাকিস্তান থেকে অনেক পর্যটক ও ভক্তকুল তুরস্কের কোনিয়া শহর পরিভ্রমণ করে। আর মাওলানা রুমির মাজার জিয়ারত শেষে তারাও আল্লামা ইকবালের এই প্রতীকী কবর জিয়ারত করে। এই প্রতীকী কবরটি মূলত আল্লামা ইকবাল ও মাওলানা রুমির আধ্যাত্মিক সম্পর্ককে বহিঃপ্রকাশের নিদর্শন মাত্র। এই সম্পর্ক কতটা গভীর ছিল?
ইকবালের কবিতায় তার ধারণা অনুমেয়। ‘বাল-ই-জিবরিল’-এর পঙক্তিমালা ‘পীর ও মুরীদ’, যেখানে মাওলানা রুমিকে ‘পীর-ই-রুমি’ বলা হয়েছে এবং ইকবাল নিজেকে ‘মুরিদ-ই-হিন্দি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মিসরের বিখ্যাত আলেম আবদুল ওয়াহহাব আজ্জাম (রহ.) একবার বলেছিলেন : ‘যদি জালালুদ্দিন রুমি এই যুগে পুনরুত্থিত হতেন তাহলে তিনি মুহাম্মদ ইকবালই হতেন। সপ্তম শতাব্দীর জালাল ও চতুর্দশ শতাব্দীর ইকবালকে একই ব্যক্তি মনে করা উচিত।’
মাওলানা রুমি, যিনি ইকবালের প্রিয় চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী মুর্শিদ ছিলেন। তাঁর খ্যাতির অন্যতম কারণ হলো তাঁর চিরন্তন সৃষ্টি ‘মাসনবী-ই-মানবী’, যা স্বীয় ধ্যান, প্রজ্ঞা ও চিন্তাধারায় ‘হাস্তে কুরআন দর জবানে পাহলভি’ নামে পরিচিত ও স্বীকৃত।
যদিও ইকবাল তাঁর যুগের এবং অতীতের অনেক চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীর চিন্তাধারা ও প্রজ্ঞার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। আর অনেকের চিন্তাধারা ও প্রজ্ঞার প্রশংসা এবং সমালোচনাও করেছেন, কিন্তু মাওলানা রুমি তাঁর জন্য একজন ‘মুর্শিদে মানবী’ ছিলেন। ইকবাল নিজেকে তাঁদের একজন মহান ভক্ত ও অনুরাগী বলে মনে করেন এবং যাঁরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁদের পরামর্শ দেন যে গাজ্জালি ও রুমি তাদের বোঝার জন্য পুনর্বিবেচনা করার যোগ্য।
মাওলানা রুমি ইকবালের কাছে এ জন্য প্রিয় ছিলেন যে তিনি সুফিবাদে এতটাই ভুলেছিলেন, তিনি প্রেমকে বুদ্ধি থেকে আলাদা নয়, বরং উচ্চতর বুদ্ধিমত্তা বলে মনে করতেন। এ কারণেই মাওলানা রুমির কাছে বুদ্ধি ও প্রেম দুটি পৃথক ধারণা এবং ব্যবস্থা নয়, বরং একে অপরের দুটি সমান্তরাল দিক ছিল।
তাই আমরা ইকবালকে দর্শন ও সুফিবাদ উভয় ক্ষেত্রেই বুদ্ধিমান ও প্রজ্ঞাবান হিসেবে বিবেচনা করতে পারি, বরং তাঁর মতে, ‘আকল হ্যায় মাহবে তামা শায়ে লাব্বে বাম আভি’ তথা বুদ্ধি এখনো বার্তার অর্থ বুঝতে পারেনি। এই দৃষ্টিকোণ থেকে এটা বোধগম্য যে আল্লামা ইকবাল মাওলানা রুমির মতো একই চিন্তাধারা ও প্রজ্ঞায় প্রবাহিত।
ভাষান্তর : আসআদ শাহীন
তথ্যসূত্র : দ্য ডেইলি পাকিস্তান ডট কম