
আল-কুদস আল-আরাবি সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েলি দখলদার প্রশাসন ২০১৩ থেকে ২০২৫ সালের গ্রীষ্ম পর্যন্ত অন্তত ৬০টি সরকারি সিদ্ধান্ত জারি করেছে, যা ফিলিস্তিনের প্রত্নসম্পদ চুরিকে বৈধতা দিয়েছে। ইসরায়েলের অফিসিয়াল নথিতেই এসব নির্দেশ প্রকাশিত হয়।
গবেষক ওয়ালিদ হাব্বাস জানান, সাম্প্রতিক পাঁচ বছরে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে নজিরবিহীনভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও লুণ্ঠন বাড়িয়েছে। তাঁর মতে, বিশ্ব ল্যুভর জাদুঘরের চুরির দিকে তাকিয়ে থাকলেও “শতাব্দীর সত্যিকারের চুরি” ঘটছে পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে।
তিনি বলেন, এই চুরিতে বহু পক্ষ জড়িত—ইসরায়েলি বসতি উন্নয়ন বিভাগ, দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, বিশ্বজুড়ে বাইবেলভিত্তিক খ্রিস্টান সংগঠনগুলো, এমনকি কিছু ফিলিস্তিনি দালালও।
ইসরায়েলি প্রশাসনের প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক ইউটিউব চ্যানেলে এমনকি এক সম্মেলনের ভিডিও রয়েছে, যেখানে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অংশগ্রহণে পরিচালিত খনন ও তথাকথিত গবেষণার বিবরণ দেওয়া হয়েছে।
প্রকাশিত সরকারি বুকলেটে দেখা গেছে, ৬৩টি স্থান পশ্চিম তীরে “ইসরায়েলি ঐতিহাসিক স্থান” হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে—যার মধ্যে ৫৯টি নাবলুসে, ৩টি রামাল্লায় ও ১টি সালফিতে অবস্থিত।
ফিলিস্তিনের পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী সালেহ তাওয়াফশা বলেন, “ইসরায়েলের এসব কর্মকাণ্ড একটি পরিকল্পিত সাংস্কৃতিক হামলা। তারা ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক পরিচয় ধ্বংস করছে এবং আমাদের প্রত্নসম্পদ নিজেদের বলে দাবি করছে।”
তিনি আরও জানান, ফিলিস্তিনের অনেক প্রাচীন স্থান বর্তমানে দখলদার বাহিনীর অবৈধ খনন, চুরি, ও দখলের শিকার। একই সঙ্গে, ইসরায়েল ৪০ মিলিয়ন শেকেল বাজেট অনুমোদন করেছে পশ্চিম তীরের প্রত্নস্থানগুলোকে “ইহুদি ঐতিহ্য” হিসেবে উপস্থাপনের প্রকল্পে, যা তাদের তথাকথিত “দীর্ঘমেয়াদি উদ্ধার পরিকল্পনা”-এর অংশ।
এই অর্থ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় — শিক্ষা, সংস্কৃতি, পরিবেশ, বিচার, প্রতিরক্ষা ও পর্যটন — থেকে সংগ্রহ করা হবে এবং ২০২৫–২০২৬ সালের মধ্যে বিতরণ করা হবে। বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে নাবলুসের সেবাস্তিয়া, জেরিহোর হাশমোনীয় প্রাসাদ, খালিল মরুভূমির হিরকানিয়া দুর্গ ইত্যাদি স্থান।
ইসরায়েলি মন্ত্রী আমিখাই এলিয়াহু প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, “আমাদের মন্ত্রণালয় পশ্চিম তীরে আনুষ্ঠানিক সার্বভৌমত্বের অপেক্ষা করবে না,” যা কার্যত আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করার ইঙ্গিত।
ইউনেস্কো ইতোমধ্যে সেবাস্তিয়া ও জেরিহো-কে বিপন্ন ঐতিহ্যের তালিকায় রেখেছে। কিন্তু দখলদার ইসরায়েল “ইহুদি ঐতিহ্য সংরক্ষণের” নামে এসব স্থানে নিজেদের পরিচয় চাপিয়ে দিচ্ছে।
তাওয়াফশা বলেন, “পশ্চিম তীরের ৩২৬টি ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে অন্তত ২১৬টি সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।” বিশেষ করে নাবলুসকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি সংসদ (কনেসেট) পশ্চিম তীরের ৩,৭৫০টিরও বেশি প্রত্নস্থান নিজেদের প্রশাসনের অধীনে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেছে।
তিনি জানান, সম্প্রতি প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের পশ্চিম তীরে খনন ও প্রত্নচুরির কাজে অংশ নিতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, এমনকি এর বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্রেডিটও দেওয়া হচ্ছে!
তাওয়াফশা আরও বলেন, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক সংগঠন, ইউনেস্কো ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এই অন্যায়গুলো নথিভুক্ত করছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ইউনেস্কো এখনো কঠোর অবস্থান নেয়নি।
তিনি শেষ করেন এই আহ্বানে: “আমরা আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই — তারা যেন ইসরায়েলের এই সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক চুরি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।”4315010#