IQNA

আফগানিস্তানের বাগরাম ঘাঁটি: ট্রাম্পের স্বপ্ন ও হুমকি, কী করবে তালেবান

10:40 - September 23, 2025
সংবাদ: 3478115
ইকনা- আফগানিস্তানের কৌশলগত বাগরাম ঘাঁটি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক মন্তব্য সবাইকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছেন। ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে এই ঘাঁটি চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে, তবে তালেবানের কাছে এটি দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন এবং দখলদারিত্বের দিনগুলোতে ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত বহন করে।
আফগানিস্তানের বাগরাম ঘাঁটি: ট্রাম্পের স্বপ্ন ও হুমকি, কী করবে তালেবানসম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি আফগানিস্তানে অবস্থিত বাগরাম বিমানঘাঁটিতে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এই ঘাঁটি চীনের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত। ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন, তালেবানরা ঘাঁটি ফেরত না দিলে তাদেরকে খারাপ পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।
 
এমন সময় ট্রাম্পের এই বক্তব্য সামনে এলো যখন আফগানিস্তান বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক দূত জালমাই খালিলজাদ আগেই ওয়াশিংটন ও তালেবানের মধ্যে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার অংশ হিসেবে বাগরাম ব্যবহারের সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। তবে তালেবান নেতারা এ বিষয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তালেবানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি জোর দিয়ে বলেছেন, আফগানিস্তান কোনো আগ্রাসন মেনে নেবে না এবং আমেরিকার ২০ বছরের ব্যর্থ উপস্থিতি প্রমাণ করেছে যে, আবারো দখলদারি প্রতিষ্ঠার মার্কিন স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব  নয়।
 
তালেবানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও যুক্তরাষ্ট্রের বাগরাম ঘাঁটি হস্তান্তরের বিষয়টি "অবাস্তব" ও অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন।
 
ইরানের ছাত্র সংবাদ সংস্থা ইসনা-কে উদ্ধৃত করে পার্সটুডে জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞদের মতে এ বিষয়ে তালেবানের অবস্থান একরকম নয়। তালেবানের একাংশ যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে আসাকে নিজেদের আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে করে, তবে অন্য একটি অংশ এটিকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও আর্থিক সহায়তা পাওয়ার সুযোগ হিসেবেও বিবেচনা করতে পারে।
 
এদিকে, কাবুল সরকারের মুখপাত্র হামদুল্লাহ ফিতরাত বলেছেন, ২০২০ সালের দোহা চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, আফগানিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের বলপ্রয়োগ বা হুমকি সৃষ্টি করবে না এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
 
২০২০ সালে তালেবান ও ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের প্রশাসনের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির ভিত্তিতে ২০২১ সালের মধ্যে সব বিদেশি সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যায় এবং এর পর তালেবান একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে, এই সরকার বর্তমানে দেশটি পরিচালনা করছে।
 
বাগরাম ছিল আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি এবং ২০ বছরের দখলদারিত্বকালে এটি মার্কিন সেনাদের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। কাবুলের উত্তরে অবস্থিত এই ঘাঁটি চীন, ইরান, মধ্য এশিয়া এমনকি রাশিয়ার ওপর নজরদারির জন্য একটি কৌশলগত অবস্থান হিসেবে পরিচিত। ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে, আফগানিস্তানে চীনের প্রভাব রোধ এবং বেইজিংয়ের আঞ্চলিক প্রকল্পগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা বাগরাম পুনর্দখলের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।
 
তবে আফগানিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং অতীতের দখলদারিত্বের তিক্ত অভিজ্ঞতা যুক্তরাষ্ট্রের বাগরামে ফেরার স্বপ্নকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।#পার্সটুডে
captcha