
ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্ব শীতল যুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ধীরে ধীরে পতনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসাবে বিবেচিত হয়।
ট্রাম্পের শাসনকাল ঠান্ডা যুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার ধীরে ধীরে ভাঙনের এক মোড় পরিবর্তনকারী মুহূর্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, বহুপাক্ষিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহার, মিত্রদেশগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ এবং জাতিসংঘ ও ন্যাটোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি অবজ্ঞা— এসবই আমেরিকার নেতৃত্বাধীন 'উদারনৈতিক বিশ্বব্যবস্থা'র বিশ্বাসযোগ্যতাকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
ইরানি সংবাদ সংস্থা ইসনা'র উদ্ধৃতি দিয়ে পার্স টুডে জানিয়েছে, ট্রাম্পের 'আমেরিকা প্রথম' নীতি তার বাণিজ্যিক ও জাতীয়তাবাদী মানসিকতার প্রতিফলন, যেখানে তিনি দীর্ঘমেয়াদি আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির চেয়ে তাৎক্ষণিক জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এর ফলে ওয়াশিংটন ও পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে বিভেদ আরও গভীর হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, চীন ও ভারতের মতো উদীয়মান শক্তিগুলো এখন বৈশ্বিক অর্থনীতি ও নিরাপত্তা ইস্যুতে ক্রমবর্ধমান ভূমিকা পালন করছে এবং বিশ্ব দ্রুত বহুমেরুকেন্দ্রিক কাঠামোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী জোটগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমে গেছে, আর জার্মানি ও জাপান এখন ওয়াশিংটন থেকে তুলনামূলকভাবে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণের চেষ্টা করছে।
একইসঙ্গে, ইসরায়েলি দখলদার সরকারের গাজা ও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধগুলো প্রমাণ করেছে যে, এই শাসনব্যবস্থা এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পদ নয়; বরং একপ্রকার বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পশ্চিম এশিয়ায় সাম্প্রতিক পরিবর্তন- বিশেষ করে কিছু আরব দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নভিত্তিক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ইঙ্গিত দেয় যে, ওয়াশিংটনের প্রভাব কমছে এবং বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্য পুনর্গঠিত হচ্ছে।
মনে হচ্ছে ট্রাম্পের প্রকৃত উত্তরাধিকার হলো 'আমেরিকার মহিমা পুনরুদ্ধার' নয়, বরং এমন এক বিশ্বব্যবস্থার দিকে পরিবর্তনের গতি বাড়ানো, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র আর একক আধিপত্যশীল শক্তি নয় বরং কেবলমাত্র বিশ্বের কয়েকটি বড় শক্তির মধ্যে একটি।#পার্সটুডে