
ছোট্ট ইভেহ শহরের প্রায় ছয় হাজার ৯০০ বাসিন্দার মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অল্প হলেও তাদের ধর্মীয় অনুরাগ ও নিষ্ঠা এই কাঠের মসজিদের দেয়ালে স্পষ্টভাবে খোদাই করা আছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা মসজিদটিকে শুধু নামাজের স্থান নয়, বরং তাদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবনের কেন্দ্র হিসেবে লালন করে এসেছে। মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী এককথায় অনন্য। স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী কাঠের নির্মাণশৈলীর সঙ্গে ইসলামী স্থাপত্যের সৌন্দর্য এমনভাবে মিলিত হয়েছে যে এটি একদিকে সরল, অন্যদিকে কালজয়ী।
কাঠের দেয়াল, মিনার ও সুষম নকশা যেন ইউরোপীয় প্রেক্ষাপটে ইসলামী নান্দনিকতার এক মৃদু অথচ গভীর প্রকাশ। মসজিদের ভেতরে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা প্রার্থনাকক্ষের বিন্যাস রয়েছে, যা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় শৃঙ্খলা ও ঐক্যের প্রতিফলন ঘটায়। বেলারুশ ইসলামিক ধর্মীয় সমিতির সদস্য শেখ আবু বকর শাবানভিচ বলেন, ‘ইভেহ মসজিদ এখন শুধু নামাজের জায়গা নয়, এটি দেশের মুসলমানদের একটি প্রধান ইসলামিক কেন্দ্র।’ তিনি আরো জানান, মুসলিম সম্প্রদায়ের সেবা ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে শিগগির মসজিদের পাশে একটি সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।
অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশে দাঁড়িয়েও ইভেহ মসজিদ আজ এক অনন্য মডেল—যেখানে ইসলামী ঐতিহ্য, বিশ্বাস ও পরিচয় একই সঙ্গে সংরক্ষিত হয়েছে। কাঠের এই সরল স্থাপনা যেন সেই প্রজন্মের গল্প বলে, যারা প্রতিকূলতার মধ্যেও তাদের ঈমান রক্ষা করেছে, শিক্ষা গ্রহণ করেছে, আর নীরবতা ও প্রশান্তির মধ্যে আল্লাহর আরাধনায় মগ্ন থেকেছে। দূর উত্তরের শীতল ভূমিতে দাঁড়িয়ে ইভেহ মসজিদ আজ ইসলামের স্থিতিস্থাপকতার এক চিরজাগ্রত প্রতীক। এটি শুধু একটি কাঠের মসজিদ নয়—এটি ইতিহাস, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের এক অমূল্য স্মারক, যা প্রমাণ করে—সত্যিকারের ঈমান কখনো বিলীন হয় না, বরং সময়ের স্রোতে আরো দীপ্ত হয়ে ওঠে।
সূত্র : আলুকা ডেটনেট