IQNA

শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ সাথে এক বৈঠকে বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা;

জীবিকার সমস্যা সমাধানে কর্মকর্তাদের গুরুত্ব সহকারে সচেষ্ট হওয়া উচিত

13:23 - March 09, 2025
সংবাদ: 3476995
ইকনা- আয়াতুল্লাহ খামেনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেনাবাহিনীর প্রধান, কর্মকর্তা এবং সামরিক ও দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে 90 এর দশকের শুরু থেকে অর্থনৈতিক সমস্যার অস্তিত্বের কথা উল্লেখ করে, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা হুমকি সহ শত্রুদের বেশিরভাগ হুমকির উদ্দেশ্য মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করা বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন:  তাদের লক্ষ্য হল ইসলামী প্রজাতন্ত্র জনগণের জীবিকা পরিচালনা করতে পারে না; অতএব, জীবিকা নির্বাহের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের গুরুত্ব সহকারে এটি সংশোধন করার চেষ্টা করা উচিত।
 
ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা ইরানের ইসলামী জনশাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পবিত্র কুরআন ও মহানবীর (সা) আদর্শ আর লক্ষ্য-ভিত্তিক বলে উল্লেখ করে বলেছেন, পশ্চিমা নীতিমালা ও আদর্শগুলোর ওপর নির্ভর করা যায় না, কারণ সেসব ইসলামী মূল্যবোধগুলোর বিরোধী। 
 
হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী গতকাল শনিবার ইরানের তিন বিভাগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং  নানা পর্যায়ের একদল উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীল ও পরিচালকদের সমাবেশে এই মন্তব্য করেছেন। তিনি রমজান সম্পর্কিত উপদেশ দেয়ার পাশাপাশি ব্যক্তি ও সামাজিক পর্যায়ে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া এবং মানুষ ও সমাজের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা উপনিবেশবাদী তৎপরতা, জাতিগুলোর সম্পদ লুট, ব্যাপক গণহত্যা, নারী-অধিকার ও মানবাধিকার সম্পর্কে মিথ্যা নানা দাবি এবং বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিমুখী বা কপট নীতি অনুসরণের কারণে পশ্চিমা সভ্যতার কলঙ্কিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে বলেছেন, পাশ্চাত্যে তথ্যের অবাধ-প্রবাহ থাকার দাবি মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়, আর এর দৃষ্টান্ত হল পশ্চিমাদের মালিকানাধীন ইন্টারনেট-ভিত্তিক (সামাজিক মাধ্যমসহ) নানা মাধ্যমে এখনও শহীদ জেনারেল কাসেম সোলায়মানি, শহীদ সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ, শহীদ ইসমাইল হানিয়া ও আরও কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের নাম নেয়ার সুযোগ নেই এবং ফিলিস্তিন আর লেবাননে ইহুদিবাদীদের অপরাধযজ্ঞ সম্পর্কে প্রতিবাদও করা যায় না। 
 
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ইরান সম্পর্কে পশ্চিমা প্রচার-মাধ্যমগুলোর নানা মিথ্যাচারের বিষয়ও স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন: এইসব প্রচার-মাধ্যমের কোনোটিতেই ইরানের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি, বিশাল গণ-সমাবেশ, জাতীয় নানা সাফল্য ও ইসলামী রাষ্ট্র-ব্যবস্থার সাফল্য নিয়ে কোনো কথা কি বলা হয়? অন্যদিকে ইরানের দুর্বল দিকগুলোকে দশগুণ বড় করা হয়। 
 
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তাঁর দেশের অকল্যাণকামীদের নেতিবাচক নানা প্রচারণা সত্ত্বেও ইরানি জাতির সর্বোচ্চ পর্যায়ের মর্যাদা আর গৌরবকে বাস্তবতা হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, যদি ইরানের রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা আত্মপরিচিতি ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো বজায় রেখে সঠিক পথে অগ্রসর হন তাহলে ইরান জাতিগুলোর জন্য ও এমনকি কোনো কোনো দেশের সরকারের জন্যও আদর্শ হতে পারে। 
 
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সক্রিয়তায়  সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং প্রতিবেশী দেশগুলো ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ আর লেনদেন বিস্তারের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন,  কোনো কোনো সরকার ও বিদেশী বলদর্পী কর্মকর্তা আলোচনার জন্য পীড়াপীড়ি করছে, অথচ তারা নানা সমস্যা সমাধানের জন্য সংলাপ চায় না বরং তারা চাইছে সংলাপের মাধ্যমে কর্তৃত্ব করতে ও তাদের পরিকল্পিত বিষয় বা শর্তগুলো চাপিয়ে দিতে; আর এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ এসব মেনে নিলে তো খুবই ভালো, আর যদি এসব মেনে না নেয় তাহলে হৈচৈ ছড়িয়ে দিবে এবং সংলাপ ত্যাগের অপবাদ দিবে প্রতিপক্ষকে।  
 
আলোচনার কথা বার বার তোলার উদ্দেশ্য যে জনমতের ওপর চাপ সৃষ্টি করা সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে ইমাম খামেনেয়ী বলেছেন, ওরা চায় জনমতের মধ্যে এই সন্দেহ সৃষ্টি করা যে ওরা আলোচনার জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা করা সত্ত্বেও ইরান আলোচনায় প্রস্তুত নয়, অথচ তাদের লক্ষ্য আলোচনা নয় বরং আলোচনার নামে কর্তৃত্ব করা ও তাদের ইচ্ছাগুলো চাপিয়ে দেয়া। 
 
ইউরোপের তিনটি দেশ (ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্স)  দাবি করছে যে ইরান পরমাণু-সমঝোতার বিষয়ে তার অঙ্গীকারগুলো পালন করেনি-এই দাবি বা ঘোষণা প্রসঙ্গে ইমাম খামেনেয়ী বলেছেন, তোমরা কি পরমাণু সমঝোতার বিষয়ে তোমাদের অঙ্গীকারগুলো পালন করেছ? তারা সেই প্রথম থেকেই তাদের অঙ্গীকারগুলো পালন করেনি এবং মার্কিন সরকার যখন ওই পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গেল তখনও ইউরোপের এই তিন দেশ এর ক্ষতিপূরণের অঙ্গীকার করা সত্ত্বেও আবারও তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। 
 
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ইউরোপীয়দের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা ও উল্টো ইরানকে চুক্তি লঙ্ঘনের অপবাদ দেয়াকে সীমাহীন লজ্জাহীনতার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ইরানের তৎকালীন সরকার এক বছর ধরে এই পরিস্থিতি সহ্য করেছে এবং এরপর ইরানের সংসদ মজলিসে শুরায়ে ইসলামী ময়দানে নামে এবং কিছু প্রস্তাব পাশ করে যা করা ছাড়া আর অন্য কোনো উপায় ছিল না, আর এখনও বলদর্পি দাবির মোকাবেলায় সেই পথ অনুসরণ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
captcha