বার্তা সংস্থা ইকনা: পশ্চিমা যুবসমাজের উদ্দেশে লেখা দ্বিতীয় চিঠিতে তিনি বলেছেন, “স্বজনদের চোখের সামনে শিশুর মৃত্যু, মায়ের পারিবারিক আনন্দ শোকে পরিণত হওয়া এবং স্ত্রীর নিথর মৃতদেহ নিয়ে স্বামীর ছুটে চলার মতো দৃশ্যগুলো মানুষকে আবেগাপ্লুত না করে পারে না। যাদের মধ্যেই মমত্ব ও মানবতাবোধ রয়েছে, তারাই এ ধরনের দৃশ্য দেখে ব্যথিত ও দুঃখিত হবে। এ ধরনের ঘটনা তা ফ্রান্সেই ঘটুক আর ফিলিস্তিন, ইরাক, লেবানন বা সিরিয়াতেই ঘটুক, মানুষ ব্যথিত ও দুঃখিত হবেই।”
তিনি বলেন, “নিশ্চিতভাবেই বিশ্বের দেড়শ’ কোটি মুসলমানের মনে এই একই ধরনের অনুভূতি কাজ করছে এবং মুসলমানেরা সন্ত্রাসী ঘটনার হোতাদের ওপর ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত। কিন্তু সমস্যা হলো, আজকের দিনের দুঃখ-কষ্ট যদি আরও সুন্দর ও নিরাপদ ভবিষ্যত গড়ার উৎস না হয়ে উঠে তাহলে কেবল তিক্ত ও নিস্ফল অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারই বাড়তে থাকবে।”
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, তোমরাই কেবল আজকের দুর্ভোগ থেকে শিক্ষা নিয়ে সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে পারবে এবং পাশ্চাত্যের ভুলপথ পরিক্রমণের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে।”
তাকিফিরি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আইএসআইএল বা দায়েশের উগ্রবাদী চিন্তাধারার সমালোচনা করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, “অকাট্য ঐতিহাসিক দলিল একথা দিবালোকের মতো স্পষ্ট করে দেয় যে, একটি বেদুঈন গোত্রের একটি উগ্র ও জঘন্য চিন্তাধারার সঙ্গে উপনিবেশবাদের মিলনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে চরমপন্থার বীজ বপন করা হয়েছে। তা না হলে, বিশ্বের সবচেয়ে মানবিক ও নীতিনৈতিকতাপূর্ণ ধর্ম- যাতে একজন মানুষের হত্যাকাণ্ডকে গোটা মানবতাকে হত্যার সমান বলে অভিহিত করা হয়েছে সেখান থেকে কীভাবে দায়েশের মতো আবর্জনা বেরিয়ে আসে? পাশাপাশি এ প্রশ্নও করতে হবে যে, যারা ইউরোপে জন্মগ্রহণ করেছে এবং ইউরোপীয় পরিবেশ ও সংস্কৃতিতে যাদের চিন্তাধারার বিকাশ ঘটেছে তারা কীভাবে এ ধরনের গোষ্ঠীতে যোগ দেয়?”
তিনি আরও বলেছেন, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য যে, একদল মানুষ যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে একবার বা দু’বার সফর করার পর হঠাৎ করে এতটা চরমপন্থি হয়ে যায় যে, নিজের দেশের নাগরিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে? এখানে যে বিষয়টি উপেক্ষা করা হচ্ছে সেটি হলো- এসব জঙ্গি একটি অসুস্থ ও সহিংস সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছে এবং জীবনের বড় অংশ কাটিয়েছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন, “এ বিষয়টিকে অবশ্যই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করতে হবে; যে বিশ্লেষণে সমাজের প্রকাশ্য ও গোপন দূষণগুলো বেরিয়ে আসে। পাশ্চাত্যে শিল্প ও অর্থনৈতিক বিকাশের বছরগুলোতে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় যে অসাম্য ও বৈষম্যের বীজ বপন করা হয়েছে কিছুদিন পরপর অসুস্থ প্রকৃতিতে হয়তো তার ফলে সৃষ্ট চাপা ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
সূত্র: রেডিও তেহরান