IQNA

ইসরায়েল কি আমেরিকার সহযোগিতা ছাড়া কাতারে হামলা চালাতে পারত?

12:58 - September 11, 2025
সংবাদ: 3478045
ইকনা- হোয়াইট হাউস দাবি করেছে, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমন্বয় না করেই কাতারে হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের গভীর সামরিক ও গোয়েন্দা সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে শুধু গুরুতর সংশয় তৈরি করেনি, বরং যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতারের ভূমিতে এমন সংবেদনশীল অভিযানের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের স্বাধীনতার মাত্রা নিয়ে মৌলিক প্রশ্নও তুলেছে।

'ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু স্বাধীনভাবে কাতারে হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন'— হোয়াইট হাউসের এই দাবি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা সম্পর্কের প্রকৃতি নিয়ে নানান প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। বিশেষ করে দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ইতিহাস বিবেচনা করলে এই দাবির সত্যতা খতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে পড়ে। আসলেই কি ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে না জানিয়ে বা সমন্বয় ছাড়াই এমন একটি সংবেদনশীল অভিযান চালাতে পারে, সেটিও এমন একটি দেশে (কাতার) যেটি আবার আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র?

পার্সটুডে'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা সম্পর্ক বিশ্বের অন্যতম গভীর ও জটিল দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা। কয়েক দশক ধরে পশ্চিম এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতম মিত্র হিসেবে ইসরায়েলকে বিবেচনা করা হয়েছে, আর এ সম্পর্ক জোরদার হয়েছে অর্থনৈতিক, সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতার মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর ইসরায়েলকে বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা দেয় এবং সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, যেমন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করে।

তাছাড়া, মোসাদ ও সিআইএ-এর মতো সংস্থার মধ্যে গোয়েন্দা সহযোগিতা এবং সামরিক গোয়েন্দা ইউনিটগুলোর (যেমন ইসরায়েলের আমান) মাধ্যমে তথ্য বিনিময় অভূতপূর্ব পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর মধ্যে রয়েছে স্যাটেলাইট ডেটা শেয়ারিং, রিয়েল-টাইম তথ্য বিনিময় ও সাইবার অভিযান, যেগুলো দোহায় হামলার মতো জটিল অভিযানে অপরিহার্য। কাতারে ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্য ছিল হামাসের নেতাদের টার্গেট করা। এমন অভিযান রাজনৈতিক ও লজিস্টিক দিক থেকে যথেষ্ট জটিল।

কাতারে অবস্থিতি আল-উদেইদ সামরিক ঘাঁটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম এশিয়ায় সামরিক অভিযানে মূল ভূমিকা পালন করে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে আমেরিকার সঙ্গে সমন্বয় ছাড়া এই ঘনিষ্ঠ মিত্রের ভূখণ্ডে হামলা চালানো বিশাল রাজনৈতিক ও সামরিক ঝুঁকি তৈরি করে—যেমন কাতারের সামরিক প্রতিক্রিয়া বা আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি। হামলার পর কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আল থানি জানান, হামলার ১০ মিনিট পরেই যুক্তরাষ্ট্র দোহাকে অবহিত করে। তিনি হোয়াইট হাউসের সেই দাবি নাকচ করেন যে, হামলার আগে দোহাকে জানানো হয়েছিল।

অপারেশনাল দিক থেকে এ ধরনের হামলা গোয়েন্দা ও লজিস্টিক সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয়, যা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় পাওয়া যায়। বিভিন্ন সূত্র জানায়, ইসরায়েল অতীতেও অনুরূপ হামলায় স্যাটেলাইট ডেটা, ড্রোন ও সাইবার অপারেশন ব্যবহার করেছে, যার বড় অংশ আমেরিকার সহায়তায় সম্ভব হয়েছে। কাতারে হামলার ক্ষেত্রেও ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শাবাক সপ্তাহখানেক আগে পরিকল্পনা শুরু করেছিল বলে *মা’রিভ* পত্রিকা জানায়। এত বড় পরিসরের প্রস্তুতি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মূল মিত্রভূমিতে, আমেরিকার অজান্তে হয়েছে—এমনটা বিশ্বাস করা কঠিন।

অন্যদিকে, আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের এই হামলাকে নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত আখ্যা দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটনের এই অবস্থান আন্তর্জাতিক চাপ কমানোর কৌশল। অথচ সিএনএন–এর মতো গণমাধ্যমে বলা হয়, এ ধরনের অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের নীরব সমর্থন ছিল। নীরব সমর্থন মানে তথ্য সরবরাহ, অভিযানে বাধা না দেওয়া বা অন্তত পরোক্ষ সমন্বয়। অতীত অভিজ্ঞতাও দেখায়, এত বড়সড় অভিযান ইসরায়েল কখনো আমেরিকার সমন্বয় ছাড়া চালায়নি।

এ ছাড়া কাতারে হামলার পর জাতিসংঘসহ বহু দেশের তীব্র নিন্দা আমেরিকার ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়িয়ে তোলে। এই চাপই সম্ভবত ওয়াশিংটনকে সরাসরি সম্পৃক্ততা অস্বীকারে প্ররোচিত করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলের গভীর সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা এবং কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বিবেচনায় নিলে, ইসরায়েল এককভাবে এই হামলা চালিয়েছে—এমন দাবি বাস্তবসম্মত নয়। যদিও হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি, কিন্তু মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই ধরনের প্রস্তুতির ব্যাপারে অজ্ঞ ছিল—এমনটা অসম্ভব।

সব মিলিয়ে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা এবং কাতারের কৌশলগত অবস্থান প্রমাণ করে যে, আমেরিকার সমর্থন ছাড়া ইসরায়েল দোহায় হামলা চালায়নি। নানা প্রমাণ,অভিযানের জটিলতা, দুই দেশের পূর্ববর্তী সহযোগিতা, এবং আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের বৈপরীত্য— ইঙ্গিত দেয় যে, আমেরিকা এই হামলার ব্যাপারে অবগত ছিল। আর হোয়াইট হাউসের দাবি যে, এটি ছিল নেতানিয়াহুর একক সিদ্ধান্ত, আসলে রাজনৈতিক পরিণতি সামলানোর কৌশল মাত্র।#

পার্সটুডে

captcha